
অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সদস্যের উপর হামলা

মিনহাজুল ইসলাম
ভাম্যমান প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে নিজেদের জমিতে জোরপূর্বক ঘর ও টয়লেট স্থাপন করে দখলের প্রতিবাদ জানানোর কারনে ঘুম থেকে ডেকে সাবেক পুলিশ সদস্যের প্রতি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে দখলকারীরা।
গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ও গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল মন্ডলের ভাতিজা এবং আবুল কালাম আজাদের ছেলে জান্নাতুল আলম মধুর নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় এ হামলা চালানো হয়েছে বলে হামলার শিকার সাবেক পুলিশ সদস্যের পরিবারের দাবি।
সোমবার সকাল ৮টা ৩০মিনিটের দিকে গোমস্তাপুর ইউনিয়নের চকপুস্তম গ্রামের সাইফুল করিম কাসেমের ছেলে সাবেক পুলিশ সদস্য মো. মোয়ায়মিনের উপর হামলায় গুরুতর আহত হলে তাকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বর্বরচিত এই হামলার বিষয়ে ঘটনার দিন থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালেও মঙ্গলবার রাতে মামলা নিয়েছেন গোমস্তাপুর থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) জসীম উদ্দীন।
হামলার শিকার মোহায়মিন, তার পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চেয়ারম্যানের ভাতিজা জান্নাতুল আলম মধু ও তার ১০/১২ জন লোক নিয়ে সকালে বাড়ির সামনে ডাক দেয়। এরপর ঘুম থেকে উঠিয়ে বাইরে ডেকে মধুর নির্দেশে লাঠি, নৌকার বৈঠা, বাঁশ, রড দিয়ে মারধর শুরু করে তারা। এমনকি মুহায়মিনের পরনে থাকা লুঙ্গি খুলে নিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় অমানবিক ও বর্বরচিতভাবে মারধর করে মধু ও তার লোকজন।
মোহায়মিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, বোন জাদিদা খাতুন কেয়া ও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে মুমতাহিনা চৈতী এগিয়ে আসলে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এসময় মোহায়মিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, বোন জাদিদা খাতুন কেয়া গলায় থাকা ১.৫ ভরির স্বর্ণের চেন ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। হামলায় মোহায়মিনের দুই পায়ের হাঁটু, বাম হাঁটুর নিচে, হাতের কনুইয়ের উপরে, পিঠে, মাজায়,পায়ের পাতায় গুরুতর জখম হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একই এলাকার সালাউদ্দিন মন্ডলের মো. মামুন রশীদ বলেন, দামুস বিলে সামান্য বিষয়কে নিয়ে সোমবার সকালে ব্যাপক মারধর করতে দেখেছি। হামলার সময় বউ, বাচ্চা কাউকেই রেহায় দেয়নি। এমনকি লুঙ্গি খুলে উলঙ্গ করেও মেরেছে। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী এজাবুল বলেন, ১০/১২ জন ছিলো তারা। লাঠি, বৈঠা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে দেখেছি।
হামলার শিকার সাবেক পুলিশ সদস্য মোহায়মিন বলেন, প্রায় ৭ বছর ধরে আমাদের জমিতে বিল দামুসের জন্য মাছ জোগানদারের ঘর, টয়লেট স্থাপন করে ব্যবহার করছে। বিল দামুসের ইজারাদার নাসিম ও তার সহযোগী চেয়ারম্যানের ভাতিজা মধুর সাথে মৌখিক কথা হয়, আমাদের জমি ব্যবহারের বিনিময়ে ছোট মাছ ধরে খেতে দিব।
তাই গত ৩দিন আগে ছোট মলা মাছ ধরতে জাল ফেললে এনিয়ে তার জোগানদার নুরুল হুদা ও জামাল এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মাছ দেয়ার কথা থাকলেও মাছ না দিয়ে আমাদের জমি ব্যবহার করলে এর প্রেক্ষিতে আমাদের দখল করা জমি ছাড়তে বলতে গেলেই তার পরদিন সকালে এই হামলা চালিয়েছে।
মোহায়মিনের বোন জাদিদা খাতুন কেয়া বলেন, হামলার দিন সকালে ভাই ঘুমিয়ে ছিলো। ডাক দিয়ে ঘুম থেকে উঠে দরজায় আসলেই মারার নির্দেয় দেয় জান্নাতুল আলম মধু। আমাদের চিৎকারে গ্রামের অনেকেই এগিয়ে আসলেও ধরার সাহস করতে পারেনি কেউ।
আমার ভাইকে এভাবে উলঙ্গ করে বেধরক অন্যায়ভাবে মারধরের বিচার চাই। মোহায়মিনের বাবা সাইফুল করিম কাসেম জানান, আমাদের জমি দখলে রেখেছে, মানা করতে গেলে আমাদের উপরই উল্টো হামলা করেছে। চেয়ারম্যানদের ভাতিজা বলে তার এমন দাপটে অন্যের জমি জোরপূর্বক দখল করে ভোগ করে।
হামলায় অংশ নেয়, নয়াদিয়াড়ী গ্রামের মৃত কেতাবের ছেলে রফিক (৪৫), মো. কাস্তুর ছেলে আসগার (৫০), বেগমনগর গ্রামের মৃত আজিরুদ্দিনের ছেলে আরশাদ হালদার (৫৫), হাজ্বী মোন্তাজের ছেলে হানজালা (৪০), মৃত কয়েশের ছেলে জলিল (৪৫), চকপুস্তম গ্রামের আক্তার মুহাম্মদের ছেলে জামাল (৪৫), দাঁড়াবাজ এলাকার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. নাইমুল (৫৫), বিশুক্ষেত্র গ্রামের ফাইজুদ্দিন মুন্সির ছেলে নুরুল হোদা (৫০), বাজারপাড়া এলাকার নজরুলের ছেলে আব্দুল মতিন (৩০), ফতেপুরের মৃত উজু ধাতলার ছেলে ঝালু আলী (৫০), খেসবার মো. রেজাসহ (৪২) আরো কয়েকজন। তিনি আরে বলেন, এনিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মামলা হবে না বলে জানান। পরে মঙ্গলবার রাতে মামলা নিয়েছে বলে জানান তিনি।
জোগানদার ও হামলায় জড়িত নুরুল হুদা মারধর কর অন্যায় হয়েছে স্বীকার করে বলেন, মাছ ধরা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর প্রেক্ষিতে লোকজন নিয়ে তার বাড়িতে যাওয়ার পর উচ্চবাক্য হলে মোহায়মিনকে মারধর করা হয়। এসময় লাঠি ও নৌকার বৈঠা নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, মারধরের এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে লুঙ্গি খুলে যায়।
জান্নাতুল আলম মধুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও অনেকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। বিলদামুসের ইজারাদার মো. নাসিম জানান, কয়েকদিন থেকে চিকিৎসার জন্য আমি রাজশাহীতে আছি। তাই এব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না।
অভিযোগ অস্বীকার করে গোমস্তাপুর থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) জসীম উদ্দীন বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।