
মোঃ সিরাজুল মনির, ব্যুরো প্রধান চট্টগ্রাম – চট্টগ্রামের সিইপিজেড থেকে নিমতলা পর্যন্ত সড়কে চলাচল করা গাড়ির ৩৭ শতাংশ ট্রাক ও লরি। এই সড়কে গণপরিবহন চলে মাত্র ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বারিক বিল্ডিং থেকে নিমতলা পর্যন্ত অংশেও চলাচল করা গাড়ির ৩৫ শতাংশ ট্রাক ও লরি। এখানে গণপরিবহন চলে ৯ শতাংশ।
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এ সমীক্ষা প্রমাণ করে, চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে গণপরিবহনের চেয়ে ট্রাক ও লরি বেশি চলাচল করে। মূলত এসব লরি ও ট্রাকের সিংহভাগই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি হওয়া পণ্য বহনে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সড়কটি সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি ব্যবহার হয় চট্টগ্রাম বন্দরের কাজে। অবশ্য সড়কটি ছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যবাহী যান বেশি চলাচল করে স্ট্র্যান্ড রোড, ঢাকা ট্রাংক রোড, পোর্ট কানেকটিং রোড, সিডিএ অ্যাভিনিউ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, আরাকান রোড ও মেরিনার্স রোড ও জাকির হোসেন রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সড়ক দিয়ে।
এদিকে চট্টগ্রাম শহরের বেশিরভাগ সড়কের ধারণ ক্ষমতা ৬ থেকে ১০ টন। অথচ বন্দরের পণ্যবাহী প্রতিটি ট্রাকে ১৮ থেকে ৮০ টন ওজনের মালামাল থাকে। আবার চটগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০ ফুট ও ৪০ ফুট দুই সাইজের কন্টেনারে করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে ২০ ফুটের কন্টেনারে সর্বোচ্চ ২৫ বা ২৬ টন এবং ৪০ ফুটের কন্টেনারে ৩০ থেকে ৩২ টন পণ্য থাকে। যদিও গড়ে এ হার হচ্ছে ২০ টন। এখন প্রতিটি লরিতে তিনটি কন্টেনার আনা-নেওয়া করলেও গড়ে ওজন হবে ৬০ টন। অর্থাৎ ধারণ ক্ষমতার চেয়েও ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি ওজনের ভার পড়ছে নগরের সড়কগুলোর উপর। এ অবস্থায় বলা হচ্ছে, বন্দরের ভারী পণ্যবাহী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে নগরের সড়কগুলো। এদিকে প্রতি বছর ভাঙা সড়ক সংস্কারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৫০০ কোটির বেশি টাকা খরচ হয়। অথচ পৌরকর (হোল্ডিং ট্যাক্স, বিদ্যুতায়ন ও আর্বজনা রেইট) খাতে বন্দর থেকে বছরে মাত্র ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা পেয়ে আসছে চসিক। তাই সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের উদ্বৃত্ত থেকে এক শতাংশ চসিককে ভাগ দেওয়ার দাবিটি ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে। অবশ্য প্রথমে এ দাবি করেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি গত ২৬ আগস্ট নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাথে দেখা করে এ বিষয়ে সহায়তা চান। সর্বশেষ গত সপ্তাহে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে চিঠিও দেন।
এর আগে পরামর্শক কমিটির সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নৌ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কমডোর জোবায়ের আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্বৃত্ত অংশ দেশের বিভিন্ন কাজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সিটি কর্পোরেশনের হিস্যা আদায় করার জন্য একটি গঠনেরও পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে মাত্র এক শতাংশ দিলেও চট্টগ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাই আমি বলব, চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।